হনুমান গীতা

হনুমান গীতা

[বাংলা ]


তুমি ব্জ্রের মত বলবান এবং বীর ।  তুমি আমার স্বামী , তুমি অন্তর্যামী ও ভক্তের রক্ষক  ।।  

হে অঞ্জনি পুত্র , বীর হনুমান , তুমি আমার লজ্জা রক্ষা কর । তোমার প্রতি লোম কুপে রাম  বিরাজ করেন ইহা পৃথিবী বিদিত । তুমি পবন পুত্র এবং পবনের নিকট হইতে তুমি শক্তি পাইয়াছ ।। শ্রীরামের কৃপায় ভক্তিও পাইয়াছ । তুমি ভিন্ন আমার কোন স্বামী নাই - তুমি ভক্তের রক্ষা কর । হে ব্জ্র অঙ্গ ও পূর্ণ ব্রহ্ম রামের সঙ্গী , আমাকে ভক্তি দাও । যে ব্যক্তি কপটতা ছাড়িয়া রাম নাম করে সে ভক্তি ও মুক্তি প্রাপ্ত হয় । তোমার হাতে গদা ও গলে মালা । তুমিই রাম নামে মাতিয়া আছ । যখন রাবন সীতা কে 
চুরি করিয়া লইয়া যায় তখন রাম বনে বনে খুঁজিতেছিল । রঘুনন্দন আদর করিয়া সীতায় খোজ করিয়াছিলেন । হনুমান রামকে দেখিয়াই চিনিয়াছিলেন -এই সেই ভগবান । রামকে দেখিয়াই মাথা 
নামাইয়াছিল এবং রামের দাস হইয়াছিল । হাতে গদা লইয়া সীতার খোঁজে চলিল ।।লঙ্কায় পৌঁছাইয়া বহু রাক্ষস মারিয়া ফেলিল । এক জন এক জন করিয়া বীর মারিতে লাগিল ।।রাবনের নিকট খবর গেল ,সকলকে হনুমান অশোক বনে সীতা কাছে নিকট গিয়াছে । রাম কে না দেখিয়া সীতা মন কষ্টে প্রান ত্যাগ করিবার উপায় ভাবিতেছিলন । সীতা বারবার বলিলেন আমার স্বামী ভিন্ন সুখ নাই , হে ভগবান আমার মা বোন এখানে কেউ ই নাই , প্রান পতি আমার নিকট নাই , এখনই আমার প্রান যাইবে ।সীতা 
দোহাই দিয়া বলিলেন হে ভগবন , আমার প্রান যায় - এই অন্তিম সময়ে আমাকে দেখা দাও । এসব কথা শুনিয়া হনুমান সীতার পাশে গিয়া উপস্থিত হইল । সীতার ক্রন্দন শুনিয়া অস্থির হইয়া গাছের ডালে গিয়া বসিল । হনুমান তখন রামের অঙ্গুরি সীতার নিকট ফেলিয়া দিল । সীতা তখন অঙ্গুরি চিনিতে পারিয়া বুকে ধরিয়া আরও কাঁদিতে লাগিলেন । আঙ্গুরি দেখিয়া সীতার মন খারাপ হইয়া গেল ।
ভাবিলেন , আমার স্বামীর অঙ্গুরি কোথা হইতে আসিল । রাক্ষসরা কি তাহাকে মারিয়া ফেলিয়াছে ।ন্তুবা তাহার আংটি হঠাৎ এখানে আসিবার কোন উপায় দেখি না । এই সকল বচন শুনিয়া হনুমান বলিল মা, তুমি বৃথা ঘাবড়াইও না । রাম লক্ষ্মণ বহু সৈন্য লইয়া সমুদ্রের তীরে আসিয়া পৌঁছাইয়াছেন । 
হনুমান বলিল, মা তুমি কেন ঘাবড়াইতেছ ? তুমি রাম নাম কর । বচন শুনিয়া সীতা হনূমান কে বর দিয়া বলিলেন তুমি বড় দুঃসময়ে আমাকে আদর করিয়া কথা বলিলে । সীতা হনুমান কে বর বলিলেন সর্বত্রই তোমার মান বর্ধিত হইবে । যে স্থানে ভগবানের নাম উচ্চারিত হইবে । হে হনুমান সেই সঙ্গে তোমার ও নাম উচ্চারিত হইবে । হনুমান এই কথা শুনিয়া সীতাকে প্রনাম করিয়া বলিল মা ,আমার বড় ক্ষুধা পাইয়াছে । সীতা বলিলেন যাও , খাওগে যাও । ফল খাইতে খাইতে তাহার যখন খুব আনন্দ হইল তখন সমস্ত বাগান ভাঙ্গিয়া দিল । সব উপড়াইয়া বাহিরে লইয়া ফেলিয়া দিল । অশোক বনে গোলমাল শুনিয়া রাবনের সৈন্যেরা তাহাকে মারিবার জন্য দউরিয়া আসিল । যত যোদ্ধা আসিয়াছিল হনুমান সকল কে মারিয়া ফেলিল । যাহারা রাম নাম করিয়াছিল তাহাদের ভিন্ন আর সকল কেই মারিয়া ফেলিয়াছিল । লংকায় তখন হাহাকার পড়িয়া গেল । রাবনের শঙ্কা তখন দূর হয় নাই । মেঘনাদ ইহা শুনিয়া রাগান্বিত হইল এবং তৎক্ষণাৎ অশোক বনে আসিল । রাক্ষসগন তখন ধোঁকা দিয়া হনুমানের গলায় পৈতা পরাইয়া দিল । অন্যান্য রাক্ষসগন ইহা দেখিবার জন্য দৌরাইয়া আসিল । এই রকম যে রামের সাথে থাকে , সেই আসল খবর কেহই জানে না । মেঘনাদ কহিল , কি হে বীর , তোমার তো এখন বাঁচা মুস্কিল দেখিতেছি । মেঘনাদ তখন কাপড় ও তুলা আনাইয়া উহার লেজে জড়াইয়া দিল । লঙ্কার বিপদ আসিয়াছে । কাজেই , ইহার লেজে আগুন লাগাইবে । হনুমান তখন লেজ ঘুরাইয়া আগুন জ্বালাইয়া দিল - কোঠা বাড়ি কিছু বাঁচিল না । চতুর রাক্ষসগন যাহারা লঙ্কাতে ছিল , তাহারা আগুন না বুঝিয়া কাঁদিতে লাগিল । হনুমান লঙ্কা জ্বালাইয়া " কে বীর আছ আইস যুদ্ধ কর " বলিয়া ডাকিতে লাগিল । পরে লেজের আগুন নিভাইতে সমুদ্র পারে উপস্থিত হইল । এই বলিয়া যখন দেখিল কেহই আসিল না , তখন সাগর পারে আসিয়া উপস্থিত হইল । সাগরে লেজ ডুবাইয়া বলিল , হে রঘুবীর ,তুমি ধন্য । তোমার কৃপায় আমি এই কাজ করিতে সক্ষম হইয়াছি । লঙ্কা জ্বালাইয়া সে সৈন্য মধ্যে ফিরিয়া আসিল । রঘুবীর এর নিকট সমস্ত ব্রিতান্ত বিবৃত করিল । সীতার সংবাদ শুনিয়া রামের নয়ন অশ্রুতে ভরিয়া উঠিল । রঘু বীর তখনই হুকুম করিলেন - জলের উপর দিয়া সত্বর রাস্তা করিয়া দাও । রঘুবীর তুমি ধন্য , ধন্য তোমার মহিমা । সৈন্যদল লইয়া তুমি লংকায় চলিলে । মহাবীর যে খেলা দেখাইয়াছে - উহা মুখে বলিয়া শেষ করা যাইবে না । মেঘনাদের সহিত যুদ্ধে লক্ষ্মণ মূর্ছিত হইয়া মাটিতে পড়িয়া গেলে , মহাবীর আর একবার বিক্রম দেখাইয়াছিল । মেঘনাদের এই কাজে অর্থাৎ লক্ষ্মণ মূর্ছিত হইলে রঘুবীর জঙ্গলে বসিয়া কাঁদিয়াছিলেন । বিভীষণ হনুমান কে বলিল , তুমি লঙ্কায় গিয়ে বৈদ্য লইয়া আইস । লঙ্কায় দ্বিগুন পাহারা বসাইয়াছিল । হনুমান লাফাইয়া চলিল । পাহারাদার দের সে হত্যা করিয়া বৈদ্যের বাড়ি পৌছিল । কোথায় সেই বৈদ্য শুইয়াছিল দেখিয়া লইয়া পালঙ্ক সমেত শায়িত অবস্থাতেই লইয়া আসিল । বৈদ্য জাগরিত হইয়া চারদিক দেখিয়া ভয় পাইল । ভাবিল কোথায় আমি শুয়াছিলাম, আর এ কোথায়ই বা আসিলাম । কোন যোদ্ধা আমাকে উঠাইয়া লইয়া আসিয়াছে । লক্ষ্মণের জন্য আমি তোমাকে এখানে লইয়া আসিয়াছি । বন বাসে আসিয়া তীর লাগিয়া কষ্ট হইয়াছে । বৈদ্য তখন লক্ষ্মণের নিকট গিয়া মস্তকে হস্ত দিয়া দেখিল প্রান আছে কি না । সে বলিল  ঔসধ দেওয়া অত্যন্ত মুস্কিল । যদি কেহ এই রুপ বলবান হয় যে এক রাত্রিতে পর্বতে গিয়ে সঞ্জীবনী ঔসধ আনিতে পারে । রাত্রিতে ঔষধ খাওয়াইতে হইবে । তাহা হইলে লক্ষ্মণ বাঁচিয়া উঠিবে । যোদ্ধা সকল ইহা শুনিয়া কেহ নড়িল না বা কেহ কিছু বলিল না । হনুমান গর্জিয়া বলিল এই দাস পর্বতে যাইবে । রাতারাতি ঔষধ আনিয়া দিব , তবে নিজেকে রামদাস বলিয়া পরিচয় দিব । হনুমান যখন পর্বতে রওয়ানা হইল তখন রাবন আর এক ধোঁকা তৈইয়ারি করিল । একজন রাক্ষস কে ভক্ত সাজাইয়া রাস্তায় বসাইল । হনুমান সেখানে উপস্থিত হইলে সে মায়াজাল বিস্তার করিল । হনুমান ধোঁকাবাজী দেখিয়া রাক্ষস কে মারিয়া ফেলিল । রাবনের আরেক ধোঁকা পর্বতে আগুন লাগাইল । ঔষধ চিনিতে না পাড়িয়া হনুমান পৌছাইতে পারিবে না । বাঘ্রের মত গর্জন করিয়া পর্বত উঠাইয়া সে চলিল । হঠাৎ তাহার এক খেয়াল হইল , ভরত কেমন বলবান দেখিয়া যাইব । ভরত সর্বদা রামনাম জপে শুনিয়াছি -একবার দেখিয়া যাইতে হইবে । 
অযোধ্যা পুরী নিকট হনুমান তখন ভরত তীর ছুড়িল । হনুমানের উরু তে তীর লাগিয়া মাটীতে পড়িয়া গেল । মাটিতে পড়িয়াই রাম রাম বলিতে আরম্ভ করিল । ভরত যখনই রামনাম শুনিতে পাইল তখন বলিল - কে রাম নাম লয় । হনুমান বলিল আমি রামের সেবক । তাই রামনাম লইতেছি । রাম রাবনের যুদ্ধ হইতেছে । মেঘনাদ লক্ষ্মণ কে মারিয়া ফেলিয়াছে । আমি সঞ্জীবনী লইতে আসিয়াছিলাম ,তুমি জখম করিয়া মাটিতে ফেলিয়াছ । ভরত ধনুকে তীর লাগাইয়া বলিল তুমি ইহার উপর উঠিয়া বস । রামের নিকট তোমাকে পৌছাইয়া দিব , তবে আমি রামের ভক্ত । ধন্য বীর তুমি ভরত ।আমি লঙ্কায় পৌছিয়াছি , করি প্রনাম বীর ব্জ্রঙ্গি । রামচন্দ্রের সেনাপতি হনুমান প্রনাম করিল । রাম চিন্তিত মুখে বসিয়াছিল , হনুমান প্রনাম করিল । সে পর্বত নামাইয়া রাখিয়া নিজের জখমী জানু দেখাইল । ঔষধ লক্ষ্মণের মুখে দেওয়া হইল । তখন সকলে তাকে ধন্য ধন্য করিতে লাগিল । লক্ষ্মণ যখন জাগিয়া উঠিলেন তখন সকলেই খুশি হইল । আবার যুদ্ধ করিতে চলিল । রাম লক্ষ্মণ কে বলি দিবার জন্য মহীরাবন তাহাদের পাতালে লইয়া গিয়াছিল ।হনুমান খুজিতে খুজিতে রাম লক্ষ্মণের খোঁজ পাইয়া দেবীর রুপ ধরিয়া সেখানে বসিয়াছিল । রাম হনুমান কে চিনিয়া বলিলেন , ধন্য আমার বলবান -দেবীর রুপ ধরিয়া বসিয়া আছে । হনুমান মহীরাবন কে মারিয়া রাম লক্ষ্মণ কে কাঁধের উপর উঠাইল । লঙ্কায় যুদ্ধে জয় লাভ করিয়া অযোধ্যাপুরী তে রঘুবীর রওনা হইলেন । যখন রঘুনাথ সিংহাসনে বসিলেন তখন মহাবীর তাহার পার্শ্বে দাড়াইয়া রহিল । লাল হীরার মালা রাম হনুমানের গলায় পরাইয়া দিয়াছিলেন । 
মহাবীর মালায় আমার কোন কাজ নেই । হনুমান কেন মালা ছিঁড়িয়া ফেলিলে রাজদরবারস্থ সকল লোক চুপি চুপি হাসিতে লাগিল । দরবারস্থ সকলে মহাবীরকে জিজ্ঞাসা করিল যে প্রভুর দেওয়া হাড় কেন তুমি ছিঁড়িয়া ফেলিলে ? ইহার গুহ্য তত্ত্ব  আমাদের শুনাও । ভগবান খুশি হইয়া মালা দিয়াছেন । সে মালা কেন তুমি নষ্ট করিয়াছ ? পূর্ণ ভক্ত সহাস্যে বলিল ইহার বিষয় তোমরা কি বুঝবে ? মালার ভিতর খুজিয়া আমার প্রিয়তম রামের নাম পাইলাম না । এই জন্য ছিঁড়িয়াছি ।
এই মালায় আমার কোন কাজ নেই , আমি কেবল এক ভগবানের প্রতি ভক্তি চাহি । এই কথা শুনিয়া সকলে বলিল , তোমার শরীরে কি রাম আছেন । এই কথা শুনিয়া হনুমান পেট চিড়িয়া প্রতি রোমে রোমে রাম নাম লেখা দেখাইল । আমি এক ভিখারি মাত্র । হে গিরিধারি , আমার অপরাধ ক্ষমা কর । হে গুনি আমি আপনার গোলাম গলায় জগতের ধাঁধা অর্থাৎ বিজয়ের ফাঁস পরিয়াছি । ভব সাগরে পার আমি কিছুই দেখিতেছি না । তুমি ভিন্ন আর কেহ লংঘাইতে পারিবে না । তুমি পিতা মাতা ও ভ্রাতা । দয়া করিয়া আমাকে ক্ষমা করিও । হে আমার প্রিয় মহাবীর , যুগলানন্দ ভুলিও না , আমার নমস্কার গ্রহণ কর । দয়া করিয়া আমাকে মনে রাখিও ।
হে দয়ার সাগর , কৃপা নিধি হনুমানজি , তোমার বারংবার বিনয় করিতেছি 
আমি করজোরে তোমাকে অনুনয় করিয়া বলিতেছি -হে মহাবীর , আমাকে স্মরণে রাখিও ।




Comments

Popular posts from this blog

পঞ্চ মুখী হনুমান কবচ